ধর্মীয় সম্প্রীতি

তৃতীয় শ্রেণি (প্রাথমিক স্তর ২০২৪) - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা - NCTB BOOK

ধর্মীয় সম্প্রীতি

অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক

ধর্মীয় সম্প্রীতি হলো সকল ধর্মের মানুষের সাথে মিলেমিশে থাকা। কারো ক্ষতি না করা। একে অন্যকে সহযোগিতা করা। সমাজের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রয়োজন। ধর্মীয় সম্প্রীতি সকল ধর্মের লোকদের সহনশীল ও সহমর্মী করে।

আমরা মুসলমান। আমাদের ধর্ম ইসলাম। আমাদের আশেপাশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ অন্য ধর্মের মানুষও বাস করে। তাঁরা আমাদের সহপাঠী, প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব ও শিক্ষক। ভিন্ন ধর্মের লোকদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। এতে আমাদের মধ্যে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় থাকবে।

বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে আমরা অন্য ধর্মের লোকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি। যেমন- একে অন্যকে সহযোগিতা করা, সামাজিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো ও অংশগ্রহণ করা, একসঙ্গে মিলেমিশে থাকা, অন্য ধর্মের প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর নেওয়া, বিপদ-আপদে তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা ইত্যাদি।

মহানবি (স.) মদিনায় বিভিন্ন ধর্মের লোকদের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি মদিনা সনদ প্রণয়ন করেছিলেন। মদিনা সনদ হলো মদিনায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য লিখিত একটি চুক্তি। এ সনদে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ অংশ নেয়। এরপর থেকে মদিনায় বিভিন্ন ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম নির্বিঘ্নে পালন করত। তারা মিলেমিশে থাকত। একে অন্যকে সহযোগিতা করত।

চিত্র: মদিনা সনদের ক্যালিগ্রাফি

আমরা অন্য ধর্মের লোকদের সঙ্গে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা করব। তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলব। তাদের ক্ষতি করব না। তাদেরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করব। তাদের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করব।

ক) বিষয়বস্তু পড়ি। শুদ্ধ-অশুদ্ধ যাচাই করি। কাজটি একাকী করি।

ক্রমিক নং

বিষয়বস্তু

শুদ্ধ/অশুদ্ধ

 ধর্মীয় সম্প্রীতি হলো সকল ধর্মের মানুষের সাথে মিলে মিশে থাকা। 
আমাদের দেশে শুধু ইসলাম ধর্মের মানুষ বাস করে। 
মহানবি (স.) মদিনায় ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। 
সমাজের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রয়োজন নেই। 
মদিনায় ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠাকারী সনদের নাম মদিনা সনদ। 

খ) কি কি কাজ করলে অন্য ধর্মের লোকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে তা বর্ণনা করি। কাজটি দলগতভাবে করি।

ভিন্ন ধর্মের মানুষের প্রতি সহনশীল আচরণ

আমাদের চারপাশে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের লোক বাস করে। তাদের সঙ্গে সহনশীল আচরণ করতে হবে।

বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে ভিন্ন ধর্মের মানুষের সঙ্গে সহনশীল আচরণ করা যায়। যেমন- তাদেরকে নির্বিঘ্নে নিজেদের ধর্ম পালন করতে দেওয়া, তাদের উৎসব ও অনুষ্ঠান পালনে বাধা না দেওয়া, তাদের উপকার করা, তাদের সম্পদের সুরক্ষা দেওয়া, তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করা, তাদের সহযোগিতা করা ইত্যাদি।

ভিন্ন ধর্মের মানুষের উপাস্যকে গালি দিতে বারণ করে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন,

وَ لَا تَسُبُّوا الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ

বাংলা উচ্চারণ: ওয়া লা- তাছুব্বুল্লাযিনা ইয়া'উনা মিন দুনিল্লাহি।

অর্থাৎ- "আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে তারা ডাকে তাদেরকে তোমরা গালি দিও না।" (সূরা আল-আনআম: ১০৮)

মহানবি (স.) নিজে ভিন্ন ধর্মের মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন। তাঁর সাহাবিগণকেও ভিন্ন ধর্মের মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহারের জন্য নির্দেশ দিতেন। মহানবি (স.) বলেছেন, যে একজন চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমের ওপর নির্যাতন করে আমি আখিরাতের দিনে তার (জুলুমকারীর) বিরুদ্ধে বিচার চাইব।

আমরা সকল ধর্মের মানুষের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করব। কাউকে তার ধর্ম পালনে বাধা দেবো না। কোনো ধর্ম সম্পর্কে মন্দ কথা বলব না। কাউকে নির্যাতন করব না। সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করব।'

ক) বিষয়বস্তু পড়ি, ভাবি ও শূন্যস্থান পূরণ করি। কাজটি একাকী করি।

১. অন্য ধর্মের লোকদের সঙ্গে আমরা ___________আচরণ করব।

২. অন্য ধর্মের লোকদের স্বাধীনভাবে _____________ পালন করতে দেওয়া হলো সহনশীল আচরণ।

৩. পবিত্র কুরআনে ভিন্ন ধর্মের লোকদের উপাস্যকে_____________ দিতে বারণ করা হয়েছে।

৪. আমাদের মহানবি (স.) ভিন্ন ধর্মের লোকদের সঙ্গে _____________ব্যবহার করতেন।

৫. আমাদের মহানবি (স.) চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমের ওপর______________ করতে নিষেধ করেছেন।

খ) ইসলামের আলোকে অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি কি কি সহনশীল আচরণ করব তা পরস্পর আলোচনা করে তালিকা করি। কাজটি দলগতভাবে করি।

গ) সূরা আল-আনআমের ১০৮ নং আয়াতের অর্থ ও শিক্ষা পোস্টারে লিখে প্রদর্শন করি। কাজটি একাকী করি।

আয়াতের অর্থ

 

 

আয়াতের শিক্ষা

 

 

ঘ) ছবি/ভিডিয়ো চিত্র দেখে অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহনশীল আচরণের ভূমিকাভিনয় করি। কাজটি জোড়ায় করি।

ভিন্ন ধর্মের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ

আমাদের চারপাশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টধর্মসহ বিভিন্ন ধর্মের লোকেরা বসবাস করেন। সমাজে তারাও সম্মানীয় ব্যক্তি। তাদের সঙ্গে আমাদের শ্রদ্ধাশীল আচরণ করতে হবে।

মানুষ হিসেবে সব ধর্মের লোক সম্মানিত। মহান আল্লাহ সকল মানুষকে সম্মানিত হিসেবে ঘোষণা করেছেন। পবিত্র কুরআনে তিনি বলেছেন,

وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ

বাংলা উচ্চারণ: ওয়ালাকাদ কারামনা বানী আদাম

বাংলা অর্থ: "আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি।" (সূরা বনি ইসরাইল: ৭০)

মহানবি (স.) ভিন্ন ধর্মের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। একবার তাঁর নিকট দিয়ে এক ব্যক্তির লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি তা দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন। উপস্থিত সাহাবিগণ বললেন, এটি তো ইহুদির লাশ। মহানবি (স.) তাদেরকে প্রশ্ন করলেন, সে কি মানুষ না? এভাবে তিনি অন্য ধর্মের মানুষদের মানুষ হিসেবে সম্মান করেছেন।

একবার নামাজের সময় হলে একজন লোক বলল, হে আল্লাহর রাসূল! নামাজের সময় হয়েছে। কিন্তু মসজিদে একদল অমুসলিম রয়েছে। মহানবি (স.) বললেন, "অমুসলিমদের কারণে ভূমি অপবিত্র হয় না।"

আমরা সকল ধর্মের মানুষকে সর্বদা সম্মান করব। তাদেরকে অভিবাদন জানাব। তাদেরকে মর্যাদা দেবো। তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেবো। তাদেরকে সহানুভূতি দেখাব। সমাজের বিভিন্ন কাজে তাদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করব। তাদের ক্ষতি হয় এমন কাজ করব না।

ক) বিষয়বস্তু পড়ি ও ভাবি। এক কথায় উত্তর বলি। কাজটি জোড়ায় করি। 

১. আমরা আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি। এটি কার বাণী? 

২. অমুসলিমদের কারণে ভূমি অপবিত্র হয় না।- এ কথা কে বলেছেন? 

৩. মৃত ইহুদির লাশকে সম্মান করে কে বলেছেন, সে কি মানুষ না? 

৪. ইসলামের শিক্ষা অনুসারে অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে কিরূপ আচরণ করব?

খ) বিষয়বস্তু পড়ি ও নিজের মতো করে সারসংক্ষেপ লিখি। কাজটি একাকী করি।

সারসংক্ষেপ লিখি

 

 

 

 

গ) অন্য ধর্মের মানুষদের প্রতি মহানবি (স.) এর আচরণ সম্পর্কে আলোচনা করি এবং তা অনুসারে কি কি কাজ করব বর্ণনা করি। কাজটি দলগতভাবে করি।

 
 
 
 
 

ঘ) অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি শ্রদ্ধাপূর্ণ আচরণ ভূমিকাভিনয় করে দেখাই। কাজটি জোড়ায় করি।

ভিন্ন ধর্মের মানুষের প্রতি সহযোগিতামূলক আচরণ

আমাদের চারপাশে রয়েছে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ। তারা আমাদের প্রতিবেশী। প্রতিবেশী যে ধর্মেরই হোক তার সহযোগিতা করা আমাদের কর্তব্য।

অভাবী, ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত বা বিপদগ্রস্ত মানুষ যে ধর্মেরই হোক তাকে সহযোগিতা করতে হয়। মহানবি (স.) অমুসলিম রোগীদের দেখতে যেতেন ও সেবা করতেন। একবার একজন ইহুদি মেহমান রাতে মহানবি (স.) এর বাড়িতে বেড়াতে এসে মলমূত্র ত্যাগ করে চলে যায়। মহানবি (স.) তা পরিষ্কার করেন। তিনি মেহমানের বাড়িতে ছুটে যান এবং তার খোঁজখবর নেন।

হজরত উমর (রা.) এক ইহুদি বৃদ্ধকে ভিক্ষা করতে দেখে সাহায্য করেন। হজরত আবদুল্লাহ্ (রা.)-এর ঘরে খাবার রান্না হলে তিনি তাঁর ইহুদি প্রতিবেশীর ঘরে খাবার পাঠাতেন।'

আমরা আমাদের প্রতিবেশী অন্য ধর্মের লোকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলব। তারা অসুস্থ হলে খোঁজখবর নেবো। বিপদে সাহায্য করব। অভাবগ্রস্ত হলে দান করব। ভালো খাবার রান্না হলে তাদের খেতে দেবো। তাদের উৎসবে উপহার পাঠাব। আমাদের সামাজিক অনুষ্ঠানে তাদের আমন্ত্রণ জানাব। তাদের পড়ালেখা ও অন্যান্য কাজে সহযোগিতা করব।

ক) বিষয়বস্তু পড়ি ও ভাবি। এক কথায় উত্তর বলি। কাজটি একাকী করি।

১) মহানবি (স.) ইহুদি মেহমানের সঙ্গে কিরূপ আচরণ করেছেন? 

২) হজরত উমর (রা.) এক ইহুদি বৃদ্ধকে ভিক্ষা করতে দেখে কীভাবে সহযোগিতা করেছেন? 

৩) হজরত আবদুল্লাহ্ (রা.) এর ঘরে খাবার রান্না হলে কী করতেন? 

৪) অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে আমরা কিরূপ আচরণ করব? 

৫) অন্য ধর্মাবলম্বী প্রতিবেশী অসুস্থ হলে আমরা কী করব?

খ) বিষয়বস্তু পড়ি, ভাবি ও বামপাশের অংশের সাথে ডানপাশের অংশ মিলাই। কাজটি একাকী করি।

 বামের অংশডানের অংশ
মহানবি (স.) অমুসলিম রোগীদেরভালো সম্পর্ক গড়ে তুলব।
হজরত উমর (রা.) এক ইহুদি বৃদ্ধকে ভিক্ষা করতে দেখেতাঁর সহযোগিতা করা আমাদের কর্তব্য।
হজরত আবদুল্লাহ্ (রা.) এর ঘরে খাবার রান্না হলেদেখতে যেতেন ও সেবা করতেন।
প্রতিবেশী যে ধর্মেরই হোকতাঁর ইহুদি প্রতিবেশীকে খাবার পাঠাতেন।
আমরা আমাদের প্রতিবেশী অন্য ধর্মের লোকদের সঙ্গেসাহায্য করেন।

গ) ইসলামের শিক্ষার আলোকে অন্য ধর্মের সহপাঠী, প্রতিবেশী বা পরিচিত মানুষের প্রতি কী দায়িত্ব পালন করব তার তালিকা করি। কাজটি জোড়ায় করি।

ঘ) ইসলামের এসব শিক্ষা অনুসারে অন্য ধর্মের দরিদ্র মানুষদের আর্থিক সহযোগিতার জন্য প্রকল্প পরিচালনা করি। এজন্য নিচের ছকে পরিকল্পনা করি। কাজটি দলগতভাবে করি।

 

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion